সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
করোনা মহামারীর দেড় বছরে সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীতে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন ৬.২৯% ছাত্রী। রাজশাহী মহানগরীর দুই থানা ও জেলার ৯টি উপজেলায় এই করোনা অতিমারির সময়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন স্কুলগামী ছাত্রীর মধ্যে ৬ হাজার ৫১২ জনই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। সেই হিসেবে রাজশাহীতে করোনাকালে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ ছাত্রী এই বাল্যবিয়ের কবলে পড়েছে বলে রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা একেবারে ঘরে আবদ্ধ ছিল। পড়াশোনার চাপ না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী অলস সময় কাটিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কিশোর-কিশোরীরা জড়িয়েছে প্রেমের সম্পর্কে। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে অল্পশিক্ষিত অভিভাবকরা করোনার এই সময়ে নিজের মেয়েকে বাল্যবিয়ের অভিশাপে নিপতিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে- রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা এলাকায় ১৫ হাজার ২২২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৭ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে ১৯ জন ও মহানগরীর মতিহার থানার ৮ হাজার ৮০০ ছাত্রীর মধ্যে ৬৪ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৩ হাজার ৪৫৭ জন। এদের মধ্যে ১২১ জন, জেলার বাগমারা উপজেলায় ৪৩ হাজার ৯৯৫ জন শিক্ষার্থীর ২১ হাজার ৩৯০ জন ছাত্রীর মধ্যে ১ হাজার ৭৮৫ জন, জেলার চারঘাট উপজেলার ৯০৩১ জন ছাত্রীর মধ্যে ৬৮৪ জন, দুর্গাপুর উপজেলার ৬৬০২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৪৯০ জন, গোদাগাড়ী উপজেলার ১২ হাজার ৯৯২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮৭৩ জন, মোহনপুর উপজেলার ৬ হাজার ৫৬০ জন ছাত্রীর মধ্যে ৫০১ জন, জেলার পবা উপজেলার ১১ হাজার ২৯৬ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮৩০ জন, পুঠিয়া উপজেলার ৭ হাজার ৫৮৭ ছাত্রীর মধ্যে ৪৬৫ জন এবং তানোর উপজেলার ৮ হাজার ৪৪২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৬৮০ জন ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- জেলার বাগমারা উপজেলায় বাল্যবিয়ের সংখ্যা কিংবা হার তুলনামূলক অন্য উপজেলার চেয়ে বেশি। তবে মহানগরীতে বাল্যবিয়ের হার অনেক কম। সাধারণত মহানগর এলাকায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠির বসবাস বেশি হওয়ায় বাল্যবিয়ের হার কম বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আরও জানা যায়, করোনার এই অতিমারীতে রাজশাহীতে কিছু বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে অভিভাবকদের সম্মতিও ছিল না। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা করোনার এই দীর্ঘ সময়ে শিক্ষার্থীদের কোনো পড়াশোনার চাপ না থাকায় এই বয়সে তারা প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েছিলো। এক পর্যায়ে অল্প বয়সেই তারা বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।
জেলার বাঘা উপজেলার পদ্মারচরে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চকরাজাপুরও পলাশি ফতেপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অর্ধশত ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৫২২ জনের মধ্যে ৩৮ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। অপরদিকে পলাশি ফতেপুর হাইস্কুলে ২৩৫ জনের মধ্যে বিয়ে হয়েছে ১২ ছাত্রীর। পলাশি ফতেপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রোকোনুজ্জামান জানান, সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও গোপনে বাল্যবিয়ে হচ্ছে। এটি রোধ করা যাচ্ছে না। এত সংখ্যক বাল্যবিয়ে সত্যিই উদ্বেগজনক।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, এমনিতে পদ্মারচরের মানুষ দরিদ্র। ছেলেমেয়েরা একটু বড় হলেই অভিভাবকরা সন্তানদের বোঝা মনে করেন। বিশেষ করে মেয়েদের। তাই বাল্যবিয়ের প্রবণতা চরাঞ্চলে অনেক বেশি।
তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, করোনাকালে উপজেলায় ৬.২৯ শতাংশ ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। এটি আসলেই উদ্বেগজনক। যাদের বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তারা যাতে স্কুলগামী থাকে।
এদিকে রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) নাসির উদ্দিন বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসচেতন অভিভাবকরা অত্যন্ত গোপনে তাদের সন্তানদের বাল্যবিয়ে দিচ্ছেন। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এমনকি বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জেলার বাল্যবিয়ের একটি চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করেছি। করোনার এই অতিমারীতে জেলায় ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে যা সত্যিই উদ্বেগজনক। আমরা চেষ্টা করছি- যারা বাল্যবিয়ের কবলে পড়েছে তারা যাতে আবারো পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।